আগুন (নাটক) একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর
Class 11 Bengali Agun Question and Answer
আগুন (নাটক) একাদশ শ্রেণীর বাংলা | Class 11 Bengali Agun Question and Answer : নমস্কার, বন্ধুরা আজকের আলোচ্য বিষয় আগুন (নাটক) একাদশ শ্রেণীর বাংলা | Class 11 Bengali Agun Question and Answer নিচে দেওয়া হলো। এই আগুন (নাটক) একাদশ শ্রেণীর বাংলা – Class 11 Bengali Agun থেকে MCQ, SAQ, Description Question and Answer, Notes গুলি আগামী একাদশ শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য খুব ইম্পর্টেন্ট।
আপনার যারা আগুন (নাটক) একাদশ শ্রেণীর বাংলা – West Bengal WBCHSE Class 11 Bengali Agun Question and Answer খুঁজে চলেছেন, তারা নিচে দেওয়া প্রশ্ন ও উত্তর গুলো ভালো করে পড়তে পারেন।
বোর্ড | ডাব্লিউ বি সি এইচ এস ই (WBCHSE) |
ক্লাস | একাদশ শ্রেণী (WB Class 11) |
বিষয় | একাদশ শ্রেণীর বাংলা |
পাঠ | আগুন (নাটক) |
আগুন (নাটক) একাদশ শ্রেণীর বাংলা | West Bengal Class 11 Bengali Agun Question and Answer
রচনাধর্মী : আগুন (নাটক) একাদশ শ্রেণীর বাংলা | Class 11 Bengali Agun [প্রশ্নমান – ৫]
১. “আলবাৎ, জানোয়ার কাঁহাকা।”-কে, কাকে উদ্দেশ করে মন্তব্যটি করেছে? তার এই প্রতিক্রিয়ার কারণ কী ছিল?
উত্তরঃ বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটকের পঞ্চম দৃশ্যে ৪র্থ পুরুষ চরিত্রটি সিভিক গার্ডকে উদ্দেশ করে উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছে।
রেশনের দোকানে চালের লাইন থেকে সিভিক গার্ড ওই ৪র্থ পুরুষ ব্যক্তিটিকে বের করে দিতে চায়, কারণ তার যুক্তি ছিল-সে বারে বারে লাইনে ঢুকেছে এবং বেরিয়েছে, আর চাল জমা করেছে অন্য কোথাও। ৪র্থ পুরুষ চরিত্রটি সে-কথা অস্বীকার করলেও সিভিক গার্ড তার কোনো কথাই শুনতে চায় না। এমনকি লাইনের অন্য ব্যক্তিরা ওই ব্যক্তির কথার সঙ্গে সহমত হলেও সিভিক গার্ড তাদের যুক্তি মানতে অস্বীকার করে। ৪র্থ পুরুষ চরিত্রটি তাকে লাইনে ঢুকতে দেওয়ার জন্য কাতর অনুনয় করে এবং সে যে আগে চাল নেয়নি তা বিশ্বাস করতে অনুরোধ জানায়। সঙ্গে কাতরভাবে বলে-“তিনটি প্রাণী দুদিন অনাহারে আছি বাবা, দয়া কর।” কিন্তু সিভিক গার্ড তার এই আর্তিকে ‘ন্যাকামি’ বলে উল্লেখ করে। ৪র্থ পুরুষ চরিত্রটির যন্ত্রণা ক্রমশ ক্ষোভে রূপান্তরিত হয় এবং সিভিক গার্ড তাকে যেভাবে ‘চোর’ অপবাদ দিচ্ছে সে তার তীব্র প্রতিবাদ করে। সিভিক গার্ডের আচরণ যখন ক্রমশ অমানবিক হয়ে ওঠে তখন অপমানিত ৪র্থ পুরুষ প্রতিবাদ করে বলে-“আমি কুকুর নই।” সিভিক গার্ড প্রবল ব্যঙ্গের সঙ্গে মন্তব্য করে ‘মানুষ নাকি!’ ৪র্থ পুরুষ ব্যক্তিটি তার প্রতিবাদ জারি রেখে বলে-“চাল দেবে না দিও না, কিন্তু তাই বলে যা তা বলো না বলছি।” সিভিক গার্ড পালটা রুখে দাঁড়ালে ৪র্থ পুরুষের সংলাপ সংযম হারায় এবং সে উল্লিখিত মন্তব্যটি করে। মূলত মানুষ হিসেবে অপমানিত হওয়ার কারণেই সে ওই প্রতিবাদসূচক মন্তব্যটি করতে বাধ্য হয়।
২. “আগুন জ্বলছে আমাদের পেটে।”-বক্তা কে? মন্তব্যটির তাৎপর্য সমগ্র নাট্যকাহিনি অবলম্বনে আলোচনা করো।
উত্তরঃ বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটকের পঞ্চম দৃশ্যে রেশনের দোকানের লাইনে হঠাৎই আগন্তুক এক যুবক মন্তব্যটি করেছে।
মন্বন্তরের ভয়াবহ দিনগুলোতে মানুষের খিদের যন্ত্রণা ও অসহায়তা ‘আগুন’ নাটকের মধ্য দিয়ে রূপ পেয়েছে। নাটকের পাঁচটি দৃশ্যে আলাদা আলাদা চরিত্র, তাদের পটভূমি ভিন্ন; কিন্তু এক জায়গায় সকলেই মিলে গেছে, তা হল খিদের যন্ত্রণা। প্রথম দৃশ্যে ছেলের ঘুম ভাঙিয়ে নেত্যর মা বাজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে, কিছু আনাজ বিক্রি করে রেশনের চাল কিনতে যাবে বলে। আর নেত্যর বাবা সংশয়ী হয়ে বলে, দেরি হয়ে যাওয়ায় “চাল আজ আর পাতি হবে নানে…”। দ্বিতীয় দৃশ্যে কৃষাণ তার স্ত্রীকে পরামর্শ দেয় কেষ্টর মা-র সঙ্গে আগে গিয়ে লাইনের একেবারে প্রথমে দাঁড়ানোর জন্য। অন্নের জন্য এই কাতরতা তীব্র হয়ে ওঠে তৃতীয় দৃশ্যে সতীশের বাড়িতে। সেখানে লাইনে দাঁড়িয়ে চাল না পাওয়ায় সেই রাতে চাল ধার করে আনতে হয় খাওয়ার জন্য এবং সকালে কারখানার কাজে যাওয়ার আগে সতীশের জন্য সামান্য খাবারও অবশিষ্ট থাকে না। চতুর্থ দৃশ্যে হরেকৃয়বাবু আক্ষেপ করেন- “চা নেই, চিনি নেই, চাল নেই, খালি আছে চুলোটা।” আর পেটে খিদের এই আগুন নিয়েই পঞ্চম দৃশ্যে রেশনের দোকানে লাইন দেয় বহুস্তরীয় সমাজের ভিন্ন ধর্মের, ভিন্ন জাতির নানা মানুষ। খিদের তাড়না যেন তাদের সকলকে একসঙ্গে মিলিয়ে দেয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানো মানুষগুলি সিভিক গার্ডের জুলুমের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রুখে দাঁড়ায়। পেটের আগুন যেন প্রতিবাদের আগুন হয়ে ওঠে। যে আগুন এক কিশোরকে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে দেয় না, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে বিপর্যস্ত করে, সেই আগুনই যেন রেশনের দোকানের লাইনে পারস্পরিক সহমর্মিতার সূত্রে মনুষ্যত্বকে নিকষিত হেম করে তোলে।
৩. “লুঙ্গি, টিকি, পৈতে, টুপি সব একাকার হয়ে গেছে।”-কে মন্তব্যটি করেছে? যে পরিস্থিতিতে তার এই মন্তব্য তা নিজের ভাষায় উল্লেখ করো।
উত্তরঃ বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটকের পঞ্চম দৃশ্যে রেশন দোকানের দোকানদার উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছে।
পঞ্চাশের মন্বন্তরের ভয়াবহ খাদ্যসংকটের দিনে রেশনের দোকানে মানুষের সারিবদ্ধ লাইন যেন হয়ে উঠেছিল খাদ্যহীনতার প্রতীক। সেই লাইনে হতদরিদ্র, বাজারে আনাজ বিক্রি করা মানুষ যেমন ছিল, কৃষক-শ্রমিকও ছিল। হরেকৃয়র মতো নিম্নমধ্যবিত্ত চাকরিজীবী মানুষও ভিড় করেছিলেন সেই লাইনে। এইরকম নানা অর্থনৈতিক শ্রেণির মানুষ যেমন সেখানে ছিল, তেমনই বাঙালি, ওড়িয়া ইত্যাদি নানা জাতির মানুষ, হিন্দু-মুসলমান-এর মতো নানা ধর্মের মানুষও জড়ো হয়েছিল চালের আশায়। নানা সমস্যা নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়েই আলোচনা করছিল, চলছিল হট্টগোলও। কিন্তু সকলেরই মূল লক্ষ্য ছিল একটাই, তা হল রেশনের দোকান থেকে চাল কিনে বাড়ি ফেরা। কিন্তু রেশনের দোকানের দোকানি এই পরিস্থিতিতে খুশি থাকতে পারেনি, কারণ তার মনে হয়েছে এই সমস্ত মানুষ একসঙ্গে জড়ো হওয়ায় তার ব্যাবসার ‘সুখ’ সব নষ্ট হয়ে গেল। পেটে খিদের আগুন নিয়ে লাইনে দাঁড়ানো মানুষেরা তাদের মধ্যে কোনো দূরত্ব এবং বিভাজন রাখেনি। বিব্রত দোকানদারের মন্তব্যে সেই সময়ের বাস্তবতাই যেন ফুটে উঠেছে।
৪. “চাউড়ের কথা বড় মস্ত কথা আছে রে দাদা।”-বক্তা কে? মন্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটকের পঞ্চম দৃশ্যে ওড়িয়া চরিত্রটি দোকানদারকে উদ্দেশ করে উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছে।
মন্বন্তরের কারণে ভয়াবহ খাদ্যসংকটের মুখোমুখি হয়ে রেশনের চালের দোকানে লাইন দিয়েছিল সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষেরা। পেশাগত, জাতিগত বা ধর্মীয় বিভাজনকে দূরে সরিয়ে মানুষগুলির যেন একটাই লক্ষ্য হয়ে উঠেছিল, তা হল খিদের আগুনের মোকাবিলা করা। কিন্তু রেশনের দোকানের দোকানদার তার দোকানের সামনে ‘লুঙ্গি, টিকি, পৈতে, টুপি’ একাকার করে দেওয়া সেই অজস্র মানুষের বিসর্পিল লাইনকে ভালো মনে মেনে নিতে পারেনি। তার কারণ খদ্দের বেড়ে যাওয়ায় অবিক্রীত চাল মজুত রেখে পরে বেশি দামে বিক্রি করে দেওয়ার অসাধু ব্যাবসা করা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। এই নিয়ে সে বিরূপ মন্তব্য করলে তার প্রতিক্রিয়ায় ওড়িয়া চরিত্রটি কোঁচড়ে চাল বেঁধে সহাস্য মুখে বলেছিল যে, ‘মুশকিলের কথা’ হল-যে হিন্দু আছে তারও যেমন চালের দরকার সেরকমই যে মুসলমান আছে তারও চাল লাগবে, আবার সাহেবলোক চাল গুঁড়ো করে পাউরুটি বানিয়ে খায়। তাই সবারই চাল প্রয়োজন এবং সে-কারণে সবাই এক হয়ে গিয়েছে।-“চাউড়ের কথা বড়ো মস্ত কথা”।
৫. “সমগ্র নাট্যকাহিনিতে পরস্পর-বিচ্ছিন্ন দৃশ্যগুলির মধ্যে যেন সংযোগসূত্র হয়ে উঠেছে রেশনের দোকানের লাইন।”-মন্তব্যটির যথার্থতা আলোচনা করো।
উত্তরঃ ১৩৫০-এর মন্বন্তরের পটভূমিকায় লেখা বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটকটিতে পাঁচটি দৃশ্যই স্বতন্ত্র। চরিত্রগুলিও দৃশ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে (হরেকৃয় চরিত্রটি ব্যতিক্রম)। কিন্তু কেন্দ্রীয় মোটিফের মতো কাহিনিতে ঘুরেফিরে এসেছে রেশনের দোকানের লাইনের প্রসঙ্গটি। আপাতবিচ্ছিন্ন কাহিনিগুলির মধ্যে এই রেশনের দোকানের লাইন যেন তৈরি করেছে এক সংযোগসূত্র। প্রথম দৃশ্যে পুরুষ চরিত্রটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, বেলা বেড়ে গেলে লাইনে দাঁড়িয়েও চাল পাওয়া যাবে না। নেত্যকে ঘুম থেকে তুলে নেত্যর মা বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে কিছু সওদা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। উদ্দেশ্য হল বিক্রির পয়সা দিয়ে রেশনের দোকান থেকে চাল কিনে আনা। নেত্য বিরক্তি প্রকাশ করে, “কী এক নাইনির তাল হইছে”।
দ্বিতীয় দৃশ্যে, কৃষাণ কৃষাণিকে উদ্দেশ করে বলে, কেষ্টর মা-র সঙ্গে সকাল সকাল গিয়ে একেবারে লাইনের প্রথমে দাঁড়ানোর জন্য।
তৃতীয় দৃশ্যে, সতীশ জুড়োনকে বলে যে, লাইনে দাঁড়িয়েও অনেককে খালি হাতে ফিরে আসতে হচ্ছে। তার কথাতেই উঠে আসে যে আগের দিন তার স্ত্রী এবং মেয়েও রেশনের দোকানে লাইন দিয়ে চাল না পেয়ে খালি হাতেই ফিরে এসেছে।
চতুর্থ দৃশ্যে, স্ত্রী মনোরমার কথামতো হরেকৃয়বাবু মনের মধ্যে সংশয় নিয়ে রেশনের দোকানে লাইন দেওয়ার জন্য যান-“… তোমার সেই লাইনে বেলা বারোটার এধারে তো কিছু পাবার আশা নেই। আর তাও যে পাবো তারও কোনো স্থিরতা নেই।”
পঞ্চম দৃশ্যে, সরাসরি উঠে আসে রেশনের দোকানের লাইন। মানুষের হট্টগোল, নিজেদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা, সঙ্গে সিভিক গার্ডের জুলুম, দোকানে অজস্র মানুষের লাইন দেখে দোকানির হতাশা। এর মধ্যেই তৈরি হয় বুভুক্ষু মানুষদের চাল সংগ্রহের দিনলিপি। এভাবে সমস্ত নাটকটির অভিমুখ ও গন্তব্য যেন নির্দিষ্ট হয়ে যায় রেশনের দোকানের চালের লাইনে। এক সংকটময় কালপর্বে এটি ছিল ইতিহাসের এক অমোঘ প্রেক্ষাপট।
৬. ‘আগুন’ নাটকে বিজন ভট্টাচার্য যে নাট্যরীতির প্রয়োগ ঘটিয়েছেন তা নিজের ভাষায় আলোচনা করো।
উত্তরঃ ‘নবান্ন’ নাটকের ভূমিকায় বিজন ভট্টাচার্য বলেছিলেন, “তদানীন্তন সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আগুন ছিল একটি পরীক্ষামূলক ক্ষুদ্র নাটিকা।” পাঁচটি দৃশ্যসমন্বিত এই একাঙ্ক নাটকটিতে নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্য পঞ্চাশের মন্বন্তরের ভয়াবহ প্রতিক্রিয়াকে যেমন তুলে ধরেছেন, সেরকমই প্রথাগত নাট্যভাবনা থেকে সরে এসে এক অভিনব নাট্যরীতির প্রয়োগ ঘটিয়েছেন।
একাঙ্ক নাটক হলেও আগুনে পাঁচটি দৃশ্য আছে এবং দৃশ্যগুলি পরস্পরবিচ্ছিন্ন, তাদের চরিত্রবিন্যাসও আলাদা। পঞ্চম দৃশ্যটি বাদ দিয়ে বাকি দৃশ্যগুলি সংক্ষিপ্ত, এমনকি দ্বিতীয় দৃশ্যটি অতিসংক্ষিপ্ত। সমাজব্যবস্থার এক-একটা কোণকে নাট্যকার যেন এক-এক ঝলকের সাহায্যে উপস্থাপন করেছেন। হতদরিদ্র ঝুপড়িবাসী, কৃষক, কারখানার শ্রমিক, নিম্নমধ্যবিত্ত চাকরিজীবী-আলাদা আলাদা দৃশ্যে, আলাদা স্তরের মানুষদের জীবনযাপনকে তুলে ধরেন নাট্যকার। কিন্তু মন্বন্তরের ভয়াবহ প্রভাবে তারা যেন একসূত্রে মিলে যায়। পঞ্চম দৃশ্যে রেশনের দোকানের দোকানদার এবং সিভিক গার্ডকে এনে নাট্যদ্বন্দ্বকে ঘনিয়ে তোলেন নাট্যকার। তবে এ নাটকের মূল দ্বন্দ্ব অবশ্যই সময়ের সঙ্গে বেঁচে থাকার দ্বন্দ্ব।
চরিত্র সৃষ্টির ক্ষেত্রে যেমন বেশ কিছু চরিত্রের নাম ব্যবহার করা হয়েছে, আবার রেশনের দোকানের লাইনে ১ম পুরুষ, ২য় পুরুষ ইত্যাদির প্রয়োগে নাট্যকার বুঝিয়েছেন যে গণচরিত্রকেই তিনি গুরুত্ব দিতে চান।
নিজের নাট্যরচনা সম্পর্কে বিজন ভট্টাচার্য লিখেছিলেন-“…এই মাটিটাকে খুব চিনতাম, ভাষাটাও জানতাম। আমাকে যা ভীষণভাবে কষ্ট দিত, কোন্ আর্টফর্মে আমি এদের উপস্থিত করতে পারব।” (‘গন্ধর্ব’, বিজন ভট্টাচার্য বিশেষ সংখ্যা)। নাটক তাঁকে সেই পরিসর দিয়েছিল। সংলাপ রচনার ক্ষেত্রে, অতি সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের সংলাপ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বিজন ভট্টাচার্য সাব-অল্টার্ন ভাষারীতির প্রয়োগ ঘটিয়েছেন-“যা কিছু রাখিছিস খপ করে গোছায়ে নে” (পুরুষ/প্রথম দৃশ্য), “শালা খিধে পেটে লিয়ে কি কাজে যেতে মন লাগে” (সতীশ/তৃতীয় দৃশ্য)-এই ধরনের সংলাপ গণনাট্যের শর্ত মেনে গণচরিত্রের স্বাভাবিক উন্মেষ ঘটায়।
নাটকের পরিণতিও হয়েছে গণনাট্যের শর্ত মেনেই। সেখানে রেশনের দোকানে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষেরা সম্মিলিত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে-“বাঁচতে হলে মিলেমিশে থাকতে হবে।” এভাবে ‘আগুন’ নাটকে গণনাট্যের প্রত্যাশিত চলনেরই অঙ্গীকার দেখা গিয়েছে বিজন ভট্টাচার্যের মধ্যে।
৭. “এখন বাঁচতে হবে। বাঁচতে হলে মিলেমিশে থাকতে হবে….”-কে মন্তব্যটি করেছে? নাট্যকাহিনির পরিপ্রেক্ষিতে মন্তব্যটির তাৎপর্য সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তরঃ বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটকের পঞ্চম দৃশ্যে ৩য় পুরুষ চরিত্রটি উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছে।
সমগ্র নাট্যকাহিনি জুড়ে নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্য তৈরি করেছেন বিপন্নতার এক ধারাভাষ্য। নেত্যদের বাড়িতে নেত্যর বাবা আশঙ্কা প্রকাশ করে যে, দেরি করে চালের লাইনে দাঁড়ালে খালি হাতে ফিরে আসতে হতে পারে। কৃষাণ তার স্ত্রীকে তাড়া দেয় কেষ্টর মা-র সঙ্গে আগেভাগে গিয়ে লাইনের প্রথমে দাঁড়ানোর জন্য। সতীশ শোনায় সমস্ত দিন লাইনে দাঁড়িয়ে ফুলকি আর তার মায়ের খালি হাতে ফিরে আসার গল্প।
হরেকৃষ্ণবাবুর বাড়িতে তাঁর স্ত্রী মনোরমা আশাপ্রকাশ করে রেশনে সেদিন দু-সের করে চাল দেবে বলে। সমস্ত আশা-হতাশার মর্মমূলে থাকে আসলে পেটের আগুন, খিদের যন্ত্রণা। রেশনের দোকানের লাইনে যেন প্রতিষ্ঠা পায় এই খিদের সাম্যবাদ। নানা জাতি ও ধর্মের মানুষ সেখানে সমবেত হয়। নিজের খিদের যন্ত্রণাকে সঙ্গে নিয়েও সকলেই যেন অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল। তাই সিভিক গার্ড ক্ষমতার প্রয়োগ করে কাউকে লাইন থেকে বেরিয়ে যেতে বললে লাইনের অন্য মানুষরা তার সাহায্যে এগিয়ে আসে, প্রতিবাদ জানায়। এক মুসলমান ব্যক্তি নিজে চাল পাওয়ার পরেও রেশনের দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করে- “কেউ ফাঁক যাবে না তো? দেখবেন।” সময়ের এই কণ্ঠস্বরকেই যেন উচ্চারণ করে ওড়িয়া চরিত্রটি-“চাউরের কথা বড়ো মস্ত কথা আছে রে দাদা।” এইসব ভাবনারই সমবেত প্রতিফলন ঘটে ৩য় পুরুষের উচ্চারণে। তা হল, সংকটের সময়ে কোনো মন কষাকষির প্রয়োজন নেই, সকলকে বাঁচতে হবে। আর বাঁচতে গেলে মিলেমিশে থাকতে হবে।
৮. ‘আগুন’ নাটকে যে সমাজবাস্তবতার প্রকাশ ঘটেছে তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তরঃ চল্লিশের ভয়াবহ মন্বন্তর সাধারণ মানুষের জীবনে যে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা নিয়ে এসেছিল তার বিশ্বস্ত রূপায়ণ ঘটেছে বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটকে।
দুর্ভিক্ষের কারণে গ্রামবাংলার অজস্র মানুষ কলকাতায় এসে ভিড় করেছিল শুধু ফ্যানের সন্ধানে। গোটা দেশজুড়ে যে খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছিল, তার শিকার শহর কলকাতার নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষেরাও হয়েছিল। সেই ছবিই প্রকাশিত হয়েছে ‘আগুন’ নাটকে। প্রথম দৃশ্যে নেত্যদের নিম্নবিত্ত পরিবারের দুশ্চিন্তা, দ্বিতীয় দৃশ্যে কৃষাণের উৎকণ্ঠা, তৃতীয় দৃশ্যে সতীশের বাড়িতে অশান্তি, চতুর্থ দৃশ্যে হরেকৃয়-মনোরমার নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের হতাশা এবং শেষপর্যন্ত রেশনের দোকানে সংকটগ্রস্ত ক্ষুধার্ত মানুষদের চালের জন্য লাইন-সর্বত্রই ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়েছে শুধু অন্নের জন্য মানুষের কাতরতা।
এই খাদ্যসংকটের পাশাপাশি সমাজজুড়ে আদর্শহীনতা এবং অপরাধপ্রবণতার ছবিকেও তুলে ধরেছেন নাট্যকার। হরেকৃয়বাবুর অফিসে কর্তারা কর্মচারীদের দেওয়ার জন্য চাল-ডাল এনে সেগুলি বাজারে চড়া দামে বিক্রি করে দিচ্ছিলেন। রেশনের দোকানের দোকানদারকে হতাশা প্রকাশ করতে দেখা যায় সমস্ত চাল বিক্রি হয়ে যাওয়ার জন্য, কারণ তার বেশি দামে চাল বিক্রি করার সুযোগ এর ফলে নষ্ট হয়ে যায়। ‘ব্যবসার সুখ’ গেল বলে তাকে আক্ষেপ করতে দেখা যায়। রেশনের দোকানের লাইনে নিরীহ মানুষের ওপরে সিভিক গার্ডের জুলুম সমাজবাস্তবতার আর-এক দিককে স্পষ্ট করে দেয়।
অজস্র নেতিবাচকতার মধ্যেও যখন রেশনের দোকানের চালের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষেরা অন্যের খবর নেয়, সকলে চাল পাচ্ছে কি না সেই ভাবনায় ভাবিত হয় এবং একসঙ্গে থাকার কথা বলে, তখন সমাজবাস্তবতার আর-এক প্রান্ত যেন উন্মোচিত হয়, যা আশার এবং উজ্জীবনের ইঙ্গিত দিয়ে যায়। ঋত্বিক ঘটক বিজন ভট্টাচার্যের মূল্যায়নে লিখেছিলেন- “বিজনবাবুই প্রথম দেখালেন কি করে জনতার প্রতি দায়িত্বশীল হতে হয়, কি করে সম্মিলিত অভিনয় ধারার প্রবর্তন করা যায় এবং কি করে বাস্তবের একটা অংশের অখণ্ডরূপ মঞ্চের ওপর তুলে ধরা যায়। … হঠাৎ একটা প্রচণ্ড আলোড়ন বাংলার একপ্রান্ত থেকে আর-একপ্রান্তকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠবৎ শিহরিত করে তুলল।” (‘গন্ধর্ব’, বিজন ভট্টাচার্য বিশেষ সংখ্যা)। ‘আগুন’ নাটকের ক্ষেত্রেও এই মূল্যায়ন সম্পূর্ণভাবে প্রযোজ্য।
৯. “আয় শুয়ে থাকলি ওদিকি আবার সব গোলমাল হয়ে যাবেনে।”-বক্তা কে? তিনি কোন্ সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করেছেন? ‘গোলমাল’ যাতে না হয় সেজন্য তিনি কী করতে বলেছেন?
উত্তরঃ বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটকের প্রথম দৃশ্যে উল্লিখিত মন্তব্যটির বক্তা ‘পুরুষ’ চরিত্রটি।
মন্বন্তরের দিনগুলিতে খাদ্যের সংকট মানুষের জীবনে তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠেছিল। ফলে রেশনের দোকানে লাইন দিয়ে চাল সংগ্রহ করা ছিল সাধারণ মানুষের এক আবশ্যিক নিত্যকর্ম। এখানে ‘পুরুষ’ চরিত্রটি সেই সমস্যার দিকেই ইঙ্গিত করেছে। আগের দিন মণিচাঁদ নামে এক চরিত্রকে দেরিতে যাওয়ার জন্য লাইনের একেবারে পিছনে দাঁড়াতে হয়েছিল। বারোটার আগে চাল পাওয়া যায় না, তা-ও আবার সেই চাল নিশ্চিতভাবে পাওয়া যাবে কি না সংশয় থাকে। কুড়োনের মা আগের দিন চাল না পেয়ে খালি হাতে ফিরে এসেছিল। এই দৈনন্দিন সমস্যার দিকেই এখানে পুরুষ চরিত্রটি ইঙ্গিত করেছে।
‘পুরুষ’ চরিত্রটি নেত্য এবং নেত্যর মা-কে ঘুম থেকে ওঠার জন্য ডাকতে থাকে। সেদিন তারা আর চাল পাবে কি না তা নিয়ে তার মনে সংশয় তৈরি হয়। কলমি শাক, দাঁতনের কাঠি, কলা ইত্যাদি যা কিছু সংগ্রহ করে রাখা হয়েছিল সেগুলি বিক্রি করে তারপরে লাইনে গিয়ে চাল কিনতে হবে। সেজন্যই তাড়াতাড়ি উঠে পড়ার জন্য সে স্ত্রী এবং ছেলেকে তাড়া দিতে থাকে।
১০. “আচ্ছা তাল হইছে রোজ সকালে। একটু ঘুমোনোর জো নেই।”-কে, কোন্ পরিপ্রেক্ষিতে মন্তব্যটি করেছে?
উত্তরঃ বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটকের প্রথম দৃশ্যে ‘নেত্য’ বা নিতাই উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছে।
১৩৫০-এর দুর্ভিক্ষের সময় যখন মানুষের মধ্যে অন্নহীনতা প্রকট, সেই সময় সমস্ত গরিব মানুষকে রেশনের দোকানে লাইন দিতে হত চালের জন্য। এই দৃশ্যে দেখা যায় পুরুষ চরিত্রটি তার ছেলে নেত্যকে ঘুম থেকে ডেকে তুলছে এবং সুস্পষ্টতই বলছে যে শুয়ে থাকলে চাল পেতে অসুবিধা হবে। আগের দিন মণিচাঁদ নামে কোনো চরিত্র লাইনের পিছনে দাঁড়ানোর কারণে চাল পেতে তার বেলা বারোটা হয়েছে, এমনকি চাল না-ও পাওয়া যেতে পারে। চাল পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা এই চরিত্রটিকে তাড়া করে বেড়ায়। সেই দুশ্চিন্তা থেকে সে এমন মন্তব্যও করে- “চাল আজ আর পাতি হবে নানে দেহিসখেন।” নেত্যর মা-কেও সে ঘুম থেকে তুলে দিতে চেষ্টা করে। কলমি শাক, দাঁতন কাঠি, কলা ইত্যাদি বিক্রি করে চাল কিনতে হবে, তার জন্যই সে তার স্ত্রী অর্থাৎ নেত্যর মাকে তাড়া দেয়। নেত্যর মা আবার নেত্যকে তাড়া দিতে থাকে এবং এই পরিপ্রেক্ষিতেই নেত্য আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে অত্যন্ত বিরক্তি প্রকাশ করে এবং বলে যে প্রতিদিন সকালে এই ‘এক নাইনির তাল’ অর্থাৎ চালের জন্য লাইনে দাঁড়ানোর বিষয় চলছে।-“একটু ঘুমোনোর জো নেই।”
১১. “আপনার যদি দরদ থাকে তো দেবেন না আপনার চালটা ওকে।”-কে, কাকে উদ্দেশ করে মন্তব্যটি করেছে? মন্তব্যটির প্রেক্ষাপট আলোচনা করো।
উত্তরঃ বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটকের পঞ্চম দৃশ্যে সিভিক গার্ড চরিত্রটি ৩য় পুরুষ চরিত্রটিকে উদ্দেশ করে উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছে।
রেশনের দোকানের লাইনে চাল প্রত্যাশী অসংখ্য মানুষ ভিড় করেছিল। সিভিক গার্ড হঠাৎই ছুটে গিয়ে দুস্থ চেহারার এক ব্যক্তির গালে চড় মারে। তার বিরুদ্ধে বারবার লাইনে ঢোকা, বেরোনো এবং চাল সংগ্রহ করে জমিয়ে রাখার অভিযোগ আনে। ওই ব্যক্তিকে পুলিশে দেওয়ার হুমকিও দেয়। ওই ৪র্থ পুরুষ ব্যক্তিটি সব অভিযোগ অস্বীকার করলেও সিভিক গার্ড তা মানতে চায় না। তখন ওই ব্যক্তির সাহায্যার্থে এগিয়ে যায় ৩য় পুরুষ চরিত্রটি এবং সেই ব্যক্তি যে লাইনে ছিল সে-কথা সে জোরের সঙ্গে বলে। সিভিক গার্ড নিজের চোখকে অবিশ্বাস করতে পারবে না জানালে ৩য় পুরুষ বলে-“নজরটাও কি আপনার একচোখে! … যে ঢুকেছে আপনি তাকে ধরতে না পেরে একজন নির্দোষ লোককে খামকা মারধোর করলেন!” এক ‘মুসলমান’ ব্যক্তি তাকে সমর্থন করে। ৩য় পুরুষ চরিত্রটি এতে আরও শক্তি পেয়ে বলে-“সিভিক গার্ড হয়েছেন তো একেবারে মাথা কিনে নিয়েছেন।” রেশনের দোকান থেকে লোকে পয়সা দিয়ে চাল নেবে, তারপরও আবার এত অত্যাচার ৩য় পুরুষ মেনে নিতে পারেনি। বিশেষত যে ব্যক্তিকে সিভিক গার্ড অভিযুক্ত করেছে সে পাঁচ-ছ ক্রোশ দূর থেকে শুধু দুটো চালের জন্য এসেছে এবং ঘণ্টাখানেক ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সিভিক গার্ড বলে যে, কে দোষী অথবা কে নির্দোষ সে কৈফিয়ত সে ৩য় পুরুষকে দেবে না। বরং তার যদি দরদ থাকে তাহলে তার নিজের চালটা ওই ব্যক্তিকে দিয়ে দিতে পারে।
১২. “এই আর কডা দিন বউ, বুঝলি।”-কে এ কথা বলেছে? এই ‘আর কডা দিন’-এর কী পরিচয় পাওয়া যায়? এরপরে কী হবে বলে বক্তা প্রত্যাশা করেছে?
উত্তরঃ বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছে কৃষাণ চরিত্রটি।
এখানে যে দিনগুলির কথা বলা হয়েছে তা আসলে কৃষাণ এবং তার মতো মানুষদের জীবন সংগ্রামের প্রাত্যহিকতা। অনাবৃষ্টির কারণে জমিতে ফসল ফলেনি। চারপাশে দুর্ভিক্ষের অশনিসংকেত। তীব্র খাদ্যসংকটে রেশনে চাল দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে, কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা অতি সামান্য। তাই লাইনে সকলের আগে না যেতে পারলে চাল পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এই উৎকণ্ঠা নিয়েই মানুষকে সময় কাটাতে হত। কৃষাণও এখানে কৃষাণিকে বলেছে,-“কেষ্টর মার সঙ্গে আগেভাগে গে নাইনির একেবারে সে পেরথমে দাঁড়াবি।” মাঠ থেকে ফিরে এসে সে যে খিদেয় কাতর হয়ে পড়ে এবং সেই খিদে সহ্য করার ক্ষমতা তার থাকে না, সে-কথাও কৃষাণ স্ত্রীকে বলে এবং সেকারণে তাকে তাড়াতাড়ি লাইন দিয়ে তাড়াতাড়ি ফিরে এসে রান্না করতে বলে। এইভাবে খিদের যন্ত্রণা, অন্নের সংকট এবং জীবনযাপনের অনিশ্চয়তাতেই পরিপূর্ণ ছিল সেই দিনগুলি।
কৃষাণ প্রত্যাশা করেছিল যে, কষ্টের দিন পার হয়ে যাবে আর কিছুদিনের মধ্যেই। চৈতালির ফসল ঘরে তুলতে পারলে কিছুদিনের মতো নিশ্চিন্ত থাকা যাবে। যদিও সে মনে মনে জানে তার অনেক ইচ্ছাই এরকম অপূর্ণ থেকে গিয়েছে, তবুও কৃষাণিকে সে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে বলে,-“আর কটা দিন একটু কষ্ট কর।”
১৩. “আরে সে কী বলব মুশকিলের কথা।”-কে, কাকে উদ্দেশ করে মন্তব্যটি করেছে? সে কোন্ মুশকিলের কথা বলেছে?
উত্তরঃ বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটকের তৃতীয় দৃশ্যে সতীশ জুড়োনকে উদ্দেশ করে মন্তব্যটি করেছে।
সতীশ জুড়োনকে যে সমস্যার কথা বলেছে তা সেই সময়ের জীবন্ত সমস্যা। অনাবৃষ্টির কারণে ফসলহীনতা থেকে খাদ্যের সংকট এবং দুর্ভিক্ষের ভ্রুকুটি, এই পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সতীশকেও অসহায় এবং দুশ্চিন্তাগ্রস্ত লাগে। আগের দিন স্ত্রী এবং মেয়ে সমস্ত দিন লাইনে দাঁড়িয়ে খালি হাতে ফিরে এসেছে এবং রাত্রে এসে অন্যের কাছ থেকে চাল ধার নিয়ে খিদে মেটানোর ব্যবস্থা করেছে, কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট ছিল না। ফলে সকাল হতেই ‘পেটে আগুন লেগে গেছে’। এদিকে তার কোম্পানিতে তিন মাস ধরে চাল-ডাল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও দিচ্ছে না। সবমিলিয়ে সতীশের মধ্যে চূড়ান্ত হতাশা দেখা যায়- “কোম্পানির ভরসা করব না, দোকানের ভরসা করব না, সে গাঁটের পয়সার ভি ভরসা করব না, তো কাকে ভরসা করি বোল!” জীবনযাপনের এই সমস্যার কথাই এখানে বলতে চেয়েছে সতীশ।
১৪. “আরে দুত্তোর নিকুচি করল তোর লাইনের।”-কে, কাকে এ কথা বলেছে এবং কখন? তার এই প্রতিক্রিয়ার কারণ কী ছিল?
উত্তরঃ বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটকের তৃতীয় দৃশ্যে সতীশ জুড়োনকে উদ্দেশ করে মন্তব্যটি করেছে।
সতীশ জুড়োনের জীবনযাত্রার পরিপ্রেক্ষিতে তার নিজের সমস্যার কথা বলছিল জুড়োনকে। যেহেতু জুড়োন একলা মানুষ তাই দুর্ভিক্ষের দিনেও সে খেয়েদেয়ে ফুর্তি করে ঘুরে বেড়াতে পারে। দু- চার পয়সা বেশি দিয়ে হোটেলেও নিজের খাবার জোগাড় করে নিতে পারে। কিন্তু সতীশের পক্ষে তা সম্ভব নয়। কারণ তাকে সংসার প্রতিপালন করতে হয়। সেখানে চাল-ডাল-এর সংস্থান করাটাই দুর্বিষহ ব্যাপার হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতেই জুড়োন সতীশের কাছে জানতে চায় যে, সে রেশনের দোকানে লাইন দিচ্ছে কি না। তখন সতীশ উল্লিখিত মন্তব্যটি করে।
সতীশের এই প্রতিক্রিয়ার কারণ হল রেশনের দোকান বিষয়ে তার বিরূপ অভিজ্ঞতা। সেখানে লাইন দিলেও খালি হাতে ফিরে আসতে হয়। আগের দিনই তার মেয়ে ফুলকি আর তার স্ত্রী চালের জন্য লাইন দিয়ে খালি হাতে ফিরে এসেছে। শেষে রাত্রে মিস্ত্রির কাছ থেকে দেড় পোয়া চাল ধার নিয়ে এসে ক্ষুধা নিবৃত্তি করেছে। সুতরাং, রেশনের দোকানে লাইন দিলেও চাল পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সেকারণেই সতীশ নিজের বিরক্তি প্রকাশ করেছে।
১৫. “কী আমার পুরুষ মানুষ রে!”-কে, কাকে উদ্দেশ করে মন্তব্যটি করেছে? মন্তব্যটির পরিপ্রেক্ষিত আলোচনা করো।
উত্তরঃ বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটকের তৃতীয় দৃশ্যে ক্ষিরি তার স্বামী সতীশকে উদ্দেশ করে মন্তব্যটি করেছে।
সতীশ তার মেয়ে ফুলকি এবং স্ত্রী ক্ষিরিকে ঘুম থেকে ওঠার জন্য ডাকাডাকি করছিল, কারণ তার কারখানায় বেরোনোর সময় হয়ে গিয়েছিল। সারাদিন সেখানে পরিশ্রম করতে হবে বলে কিছু খেয়ে বাড়ি থেকে বেরোতে চাইছিল, সেজন্যই সে তাড়া দিচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে ক্ষিরি ফুঁসে ওঠে এবং মন্তব্য করে যে বাড়ির পরিস্থিতি কিছুই সতীশের অজানা নয়। আগের দিন রাতে সে নিজেই মিস্ত্রির কাছ থেকে দেড় পোয়া চাল ধার করে এনেছে এবং তার মধ্যে বেশিরভাগ সতীশ নিজেই খেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অসহায় ক্ষিরি তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলে, “এখন সকালবেলাই তোমার পিন্ডি জোগাই কোত্থেকে বলতো।” ক্ষিরির এই তীক্ষ্ণ কণ্ঠ সতীশ সহ্য করতে পারে না। সে বলে, “তোর সে মুখের সাজা কিন্তু আমি একদিন আচ্ছা করে দিয়ে দেব।” এতে ক্ষিরি আরও উত্তেজিত হয় এবং বলে যে পরনের কাপড়, পেটের ভাত দিতে পারে না, শুধু ‘লম্বা চওড়া কথা’। ‘সাজা’ দেওয়ার কথা বলে সতীশ যে পৌরুষের প্রকাশ ঘটাতে চায় তাকে ব্যঙ্গ করে ক্ষিরি বলে কেলোর বাবাকে দেখে আসার জন্য-“কেলোর মাকে কী হালে রেখেছে।” এই পরিপ্রেক্ষিতেই সতীশকে ব্যঙ্গ করে ক্ষিরি উল্লিখিত মন্তব্যটি করে।
১৬. “তোর মুখের সাজা আমি আজ ভালো করে দিয়ে যাব।”-কে, কাকে এ কথা বলেছে? কোন্ পরিস্থিতিতে তাকে এরকম মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছে?
উত্তরঃ বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটকের তৃতীয় দৃশ্যে সতীশ তার স্ত্রী ক্ষিরিকে উদ্দেশ করে মন্তব্যটি করেছে।
কারখানায় কাজে যাওয়ার আগে সতীশ তার মেয়ে ফুলকি এবং স্ত্রীকে ঘুম থেকে ডেকে তুলতে চায়। শুধু তাই নয় তারা ঘুমিয়ে থাকায় সে বিরক্তিও প্রকাশ করে। সারাদিন কারখানায় ঘানি টানতে হবে, তাই বেরোনোর আগে একটু খাবারের প্রয়োজন, এটাই ছিল তার বিরক্তির কারণ। কিন্তু তার ক্ষুব্ধ চিৎকারের প্রতিক্রিয়ায় সতীশের স্ত্রী ক্ষিরি ফুঁসে ওঠে। উত্তেজিত ক্ষিরি বলতে থাকে যে সতীশ অনর্থক চিৎকার করছে। ধার করে আনা আগের দিনের চালের বেশিটাই সতীশ নিজে খেয়েছে, তাই সকালবেলায় খাবারের কোনো জোগান দেওয়া সম্ভব নয়। সতীশ এতে আরও উত্তেজিত হয়ে পড়ে। ক্ষিরির কথা সে সহ্য করতে পারে না এবং স্পষ্টই বলে যে, “তোর সে মুখের সাজা কিন্তু আমি একদিন আচ্ছা করে দিয়ে দেব।” ক্ষিরিও দমার পাত্রী ছিল না, সে স্পষ্টই জানায়, ‘পরনে নেই কাপড়, পেটে নেই ভাত’, এই অবস্থায় সতীশের ‘লম্বা চওড়া কথা’ শুনতে সে রাজি নয়। কেলোর বাবা কেলোর মাকে কী হালে রেখেছে সে কথাও সে সতীশকে শুনিয়ে দেয়। সতীশ ক্ষিরির এই সমস্ত অভিযোগ অথবা অনুযোগ মেনে নিতে পারে না। সে ক্ষিরিকে লাথি মারে। ক্ষিরি আর্তনাদ করে ওঠে। সতীশ তাতে কোনো ভূক্ষেপ না করে সেই সময় উল্লিখিত মন্তব্যটি করে।
১৭. ‘আগুন’ নাটকে চরিত্র সৃষ্টির ক্ষেত্রে নাট্যকার যে অভিনবত্ব দেখিয়েছেন তা আলোচনা করো।
উত্তরঃ বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটকটির অভিনয় দিয়ে যে গণনাট্য আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, সেই নাট্য-আন্দোলন আদর্শগতভাবেই ব্যক্তি চরিত্রের মহত্ত্ব অপেক্ষা গণচরিত্রের প্রতিষ্ঠাকে গুরুত্ব দিত। ‘আগুন’ নাটকটিতেও দেখা যায় চরিত্রনির্মাণে কোনো ব্যক্তিপ্রাধান্য ঘটেনি। পাঁচটি দৃশ্যের প্রথম চারটি দৃশ্যে আলাদা পটভূমি এবং সেখানে চরিত্ররাও আলাদা। পঞ্চম দৃশ্যে রেশনের দোকানের লাইনে অসংখ্য মানুষ সমবেত হয়েছে। সেখানে আগের দৃশ্য থেকে যেমন চরিত্র এসেছে, আবার নতুন একাধিক চরিত্রও এসেছে। কিন্তু তারা সকলে মিলে আসলে হয়ে উঠেছে চালপ্রত্যাশী সারিবদ্ধ ক্ষুধার্ত জনতা।
প্রথম দৃশ্যে রয়েছে নেত্য, নেত্যর মা এবং নেত্যর বাবা (পুরুষ)। হতদরিদ্র এই পরিবারের পেশাগত পরিচয় না পাওয়া গেলেও সংকটের মুহূর্তে বাজারে কলমি শাক, দাঁতন কাঠি, কলা ইত্যাদি বিক্রি করে কিছু অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করে তারা। দ্বিতীয় দৃশ্যে আসে কৃষাণ চরিত্রটি, সে স্বপ্ন দেখে চৈতালির ফসল মাচায় তুলে কিছুদিনের জন্য নিশ্চিন্ত হবে। তৃতীয় দৃশ্যে কারখানার শ্রমিক সতীশ এবং জুড়োনের কথায় উঠে আসে জীবনযাপনের সংকটের কথা। স্ত্রী ক্ষিরির সঙ্গে সতীশের অশান্তি যেন সেই অভাব এবং অনিশ্চয়তার উপজাত ফসল। চতুর্থ দৃশ্যে আসে হরেকৃয় এবং মনোরমা। চাকরিজীবী হরেকৃয়ও খাদ্যসংকটের সময় প্রবল অনিশ্চয়তায় ভোগেন। বিভিন্ন চরিত্র, তাদের বিভিন্ন অবস্থান; কিন্তু একটা জায়গায় তারা সকলে মিলে যায় তা হল, তাদের অন্নচিন্তা এবং জীবনযাপনের তীব্র অনিশ্চয়তা। পঞ্চম দৃশ্যে রেশনের দোকানে এই ক্ষুধার্ত মানুষগুলিই ভিড় করে থাকে, কিন্তু সেখানে তারা পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল। “বাঁচতে হলে মিলেমিশে থাকতে হবে”-এই বোধে সেই সংকটের মুহূর্তেও দীপ্র হয়ে থাকে চরিত্রগুলি। এক সমস্যা, এক সংকট এবং একই স্বপ্নে চরিত্রগুলি আন্দোলিত হয়ে থাকে। এভাবেই তারা হয়ে ওঠে সার্থক গণচরিত্র, ‘আগুন’ নাটকের নায়ক।
১৮. ‘আগুন’ নাটকে দোকানদার এবং সিভিক গার্ড চরিত্র দুটি নির্মাণে নাট্যকারের দক্ষতা আলোচনা করো।
উত্তরঃ ‘আগুন’ নাটকে দুর্ভিক্ষের ও তার শিকার বিভিন্ন চরিত্রের দুঃখ-দুর্দশা এবং একসঙ্গে চলার অঙ্গীকারের বিপরীতে দোকানদার এবং সিভিক গার্ড চরিত্র দুটির উপস্থাপনা ঘটেছে নেতিবাচক চরিত্র হিসেবে।
দোকানদার: সূচনা থেকেই প্রতিটা দৃশ্যে নাট্যকাহিনির অভিমুখ ছিল রেশনের দোকানের দিকে। পঞ্চম দৃশ্যে সেই রেশনের দোকানই পটভূমি হয়েছে এবং আবির্ভাব ঘটেছে দোকানদারের। ‘মোটা নাদুস- নুদুস তেল কুচকুচে’ চেহারা, ফতুয়ার নীচে তার ভুঁড়ির স্বপ্রকাশ। দোকানের সামনে গঙ্গাজল ছিটিয়ে, সিদ্ধিদাতা গণেশকে প্রণাম করে, দাঁড়িপাল্লায় আঙুল ঠেকিয়ে মাথায় ছুঁইয়ে তারপর সে দোকানে তার গদিতে চেপে বসে। নাটকে সর্বসাকুল্যে তার সংলাপ দুটি। মুসলিম চরিত্রটি তার কাছে যখন জিজ্ঞাসা করে যে সকলে চাল পাবে কি না, তখন দোকানি তাকে বলে- “সে খোঁজে তোমার দরকার কী কত্তা। তুমি তো পেয়েছ, যাও, ভালোয় ভালোয় কেটে পড়।” তার প্রকৃত স্বরূপ প্রকাশ পায় যখন নানা জাতি ও ধর্মের মানুষকে রেশনের দোকানের সামনে সারিবদ্ধ দেখে সে হতাশা প্রকাশ করে। তার মনে হয়, “ব্যবসার সুখ এই গেল।” আসলে অবিক্রীত চাল পরে বেশি দামে বিক্রি করার যে অসাধু ব্যাবসা, এর ফলে তা বাধাপ্রাপ্ত হবে বলেই দোকানি এই হতাশা প্রকাশ করেছে। পরে ওড়িয়া চরিত্রটিকেও সে বলেছে, “হাতি যখন নোদে পড়ে চামচিকে তায় লাথি মারে।” দুর্ভিক্ষের দিনে শুধু খাদ্যের সংকট নয়, মানুষের মধ্যে যে অসাধু মানসিকতা এবং মূল্যবোধের অভাব দেখা দিয়েছিল দোকানদার তার উদাহরণ হয়ে থাকে।
সিভিক গার্ড: সিভিক গার্ড চরিত্রটিকে সূচনা থেকেই দেখা যায় লাইনে দাঁড়ানো সাধারণ মানুষের ওপরে জুলুম চালাতে। টিকিট আছে কি না, খুচরো পয়সা সঙ্গে আছে কি না ইত্যাদি নানা প্রশ্নে সে বিব্রত করতে থাকে লাইনের ক্ষুধার্ত মানুষদের। ১ম পুরুষ চরিত্রটিকে সে অবলীলায় বলে যে, খুচরো না থাকলে ‘নেবেন না চাল’। ১ম পুরুষ ব্যক্তিটি আইনের কথা বলতে গেলে সিভিক গার্ড অপরিসীম ঔদ্ধত্যে বলে, “ও সব আইনের কথা বলবেন আদালতে গিয়ে- এখানে নয়।” অর্থাৎ প্রকারান্তরে সিভিক গার্ড যেন হয়ে ওঠে আইনহীনতার রক্ষক। যুক্তিহীনভাবে লাইনে দাঁড়ানো বিভিন্ন মানুষকে সে বের করে দিতে চায়। কেউ তার প্রতিবাদ করলে তাকেও সিভিক গার্ডের আক্রমণের শিকার হতে হয়। “পরের জন্যে দরবার করতে হবে না আপনাকে।”-এই নির্দয়তা সিভিক গার্ডের প্রতিটি উচ্চারণে মিশে থাকে।
নির্মাণের সার্থকতা: দোকানদার এবং সিভিক গার্ড দুটো চরিত্রই সময়ের উপজাত ফসল। শুধু নাট্যদ্বন্দ্ব নয়, গণনাট্যের উদ্দেশ্যপূরণেও এই চরিত্র দুটি পরোক্ষভাবে সাহায্য করেছে। দোকানদার যখন চিন্তা করছিল নানা ধর্ম ও জাতির অজস্র মানুষ একসঙ্গে লাইনে এসে দাঁড়ানোয় তার ব্যাবসা নষ্ট হচ্ছে, তখন ওড়িয়া চরিত্রটি যেন সময়ের কণ্ঠস্বরকে স্পষ্ট করে দেয় এই বলে যে, হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সকলেরই চালের প্রয়োজন আছে। “চাউড়ের কথা বড় মস্ত কথা আছে রে দাদা।” সিভিক গার্ডের জুলুমের প্রতিবাদে মানুষ যেভাবে সংঘবদ্ধভাবে এগিয়ে এসেছে তা বুঝিয়ে দেয় যে, এই সহমর্মিতা এবং একতার শক্তিতে মানুষ একদিন সেই করাল সংক্রান্তিকে অতিক্রম করে যাবে।
১৯. “মহা মুশকিলেই পড়া গেল দেখছি।”-বক্তা কে? সে এখানে কোন্ ‘মহা মুশকিল’-এর কথা বলেছে?
উত্তরঃ বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটকের চতুর্থ দৃশ্যে উল্লিখিত মন্তব্যটির বক্তা হরেকৃয়।
তেরোশো পঞ্চাশ-এর মন্বন্তরের সময় যে ভয়াবহ খাদ্যসংকট হয়েছিল তার ফল শুধু শ্রমিক-কৃষকরা ভোগ করেনি, অনিশ্চয়তা নেমে এসেছিল নিম্ন মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী মানুষদের জীবনেও। হরেকৃয়বাবু এই শ্রেণির প্রতিনিধি হিসেবেই নিজের আক্ষেপ ও অসহায়তার কথা জানিয়েছেন-“চা নেই, চিনি নেই, চাল নেই, খালি আছে চুলোটা। তাও আবার কয়লার অভাব।” স্ত্রী মনোরমা আশ্বস্ত করার জন্য বলে যে, সে শুনেছে সেদিন নাকি দু-সের করে চাল দেবে। কিন্তু হরেকৃয়বাবুর কাছে সেই চাল সংগ্রহ করার সময়টাও ছিল অসুবিধাজনক। দশটায় তাঁর অফিস, অন্যদিকে রেশন দোকানে বারোটার আগে কিছু পাওয়ার আশা নেই। শেষপর্যন্ত লাইনে দাঁড়ালেও যে পাওয়া যাবেই, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। দোকানি হয়তো শেষকালে হাত উলটে বলবে, “ফুরিয়ে গেছে।” ‘মহা মুশকিল’ শব্দবন্ধের সাহায্যে এই সংকটময় পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
২০. “যে রক্ষক সেই হল গিয়ে তোমার ভক্ষক।”-কে মন্তব্যটি করেছে? মন্তব্যটির প্রেক্ষাপট আলোচনা করো।
উত্তরঃ বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটকের চতুর্থ দৃশ্যে উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছেন কেরানি হরেকৃষ্ণবাবু।
অনাবৃষ্টির কারণে যে ফসলহীনতা এবং তার ফলে যে ভয়াবহ খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছিল, সেই পরিস্থিতিতে অফিসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল কর্মচারীদের চাল-ডাল দেওয়ার। হরেকৃয়বাবু যখন বাড়িতে চাল, চিনি ইত্যাদির সংস্থান না থাকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন তখন তাঁর স্ত্রী মনোরমা তাঁকে সে-কথা মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু হরেকৃয়বাবু অত্যন্ত বিরক্তির সঙ্গে তাকে অফিসের কথা তুলতে বারণ করেন এবং বলেন “একেবারে ঘেন্না ধরিয়ে দিলে।” তাঁর কথায় এক কেলেঙ্কারির কথা প্রকাশ্যে আসে। কর্মচারীদের নাম করে সস্তা দরে চাল-ডাল এনে অফিসের কর্তারা সেগুলি চড়া দামে বাজারে বিক্রি করছেন। এইভাবে ব্যাবসা চলছে আর মানুষ জানছে যে অফিসের কর্মচারীরা সস্তা দরে চাল ডাল পাচ্ছে। আসলে সুবিধে ভোগ করছে ম্যানেজার আর তাদের মোসাহেবরা। চারপাশে শুধু “চোর ছেঁচড়ের আড্ডা”। এই প্রেক্ষাপটে হরেকৃষ্ণবাবু বলেছেন, “যে রক্ষক সেই হল গিয়ে তোমার ভক্ষক।”
Class 11 Question and Answer | একাদশ শ্রেণীর সাজেশন
আরো পড়ুন:-
Class 11 Bengali Suggestion Click here
আরো পড়ুন:-
Class 11 English Suggestion Click here
আরো পড়ুন:-
Class 11 Geography Suggestion Click here
আরো পড়ুন:-
Class 11 History Suggestion Click here
আরো পড়ুন:-
Class 11 Political Science Suggestion Click here
আরো পড়ুন:-
Class 11 Philosophy Suggestion Click here
আরো পড়ুন:-
Class 11 Sanskrit Suggestion Click here
আরো পড়ুন:-
Class 11 Education Suggestion Click here
আরো পড়ুন:-
Class 11 Sociology Suggestion Click here
West Bengal class 10th Bengali Board Exam details info
West Bengal Council of Higher Secondary Education (WBCHSE) Class 11 Exam Bengali Question and Answer download for Bengali subject. West Bengal Council of Higher Secondary Education will organise this Examination all over West Bengal. Students who are currently studying in Class 10th, will sit for their first Board Exam Class 11. WBCHSE Class 11 Bengali question paper download.
Class 11 Bengali Agun Syllabus
West Bengal Class 11 Bengali Agun Syllabus with all the important chapters and marks distribution. Download the Class 11 Bengali Agun Syllabus and Question Paper. Questions on the Bengali exam will come from these chapters. All the chapters are equally important, so read them carefully.
Class 11 Bengali Syllabus Download Click Here
আগুন (নাটক) একাদশ শ্রেণীর বাংলা | Class 11 Bengali Agun Question and Answer
আগুন (নাটক) একাদশ শ্রেণীর বাংলা | Class 11 Bengali Agun Question and Answer : আগুন (নাটক) একাদশ শ্রেণীর বাংলা | Class 11 Bengali Agun Question and Answer – আগুন (নাটক) একাদশ শ্রেণীর বাংলা | Class 11 Bengali Agun Question and Answer উপরে আলোচনা করা হয়েছে।
West Bengal WBCHSE Class 11 Bengali Agun Question and Answer | আগুন (নাটক) একাদশ শ্রেণীর বাংলা
West Bengal WBCHSE Class 11 Bengali Agun Question and Answer | আগুন (নাটক) একাদশ শ্রেণীর বাংলা : Class 11 Bengali Agun Question and Answer Question and Answer | আগুন (নাটক) একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর – West Bengal WBCHSE Class 11 Bengali Agun Question and Answer | আগুন (নাটক) একাদশ শ্রেণীর বাংলা উপরে আলোচনা করা হয়েছে।
Class 11 Bengali Agun Question and Answer | আগুন (নাটক) একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর
Class 11 Bengali Agun Question and Answer | আগুন (নাটক) একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর : Class 11 Bengali Agun Question and Answer | আগুন (নাটক) একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর – Class 11 Bengali Agun Question and Answer | আগুন (নাটক) একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর গুলো উপরে আলোচনা করা হয়েছে।
আগুন (নাটক) একাদশ শ্রেণীর বাংলা | Class 11 Bengali Agun Question and Answer
এই “আগুন (নাটক) একাদশ শ্রেণীর বাংলা | Class 11 Bengali Agun Question and Answer” পোস্টটি থেকে যদি আপনার লাভ হয় তাহলে আমাদের পরিশ্রম সফল হবে। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ বোর্ডের সিলেবাস অনুযায়ী সমস্ত শ্রেণীর প্রতিটি অধ্যায় অনুশীলন, বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার গাইডেন্স ও চারীর খবর বা শিক্ষামূলক খবর জানতে আমাদের এই Porasuna.in ওয়েবসাইটি দেখুন, ধন্যবাদ।